কেন তরুণরা কাজ পাচ্ছে না, ঝুঁকি কী—and কীভাবে দক্ষতা, নীতি ও উদ্যোক্তা-সংস্কৃতি বদলে বাংলাদেশ যুব বেকারত্ব হ্রাস করতে পারবে।
যুব সমাজ ও বেকারত্ব: সফল ভবিষ্যত বানাতে করণীয় কী?
- আপডেট সময় : ০৮:৩০:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫
- / 176
সংক্ষিপ্ত সারমর্ম
বাংলাদেশে যুব বেকারত্বের মান ও পরিমাপ ভিন্ন উৎসে ভিন্ন দেখালেও তরুণদের জন্য উপযুক্ত ও গুণগত চাকরি তৈরির তাগিদ বাড়ছে। দ্রুত বদলে যাওয়া অর্থনীতি ও প্রযুক্তি, শিক্ষার বাজারের অনিমেলতা, এবং দক্ষতা-অভাবই প্রধান কারণ। সমাধান: দক্ষতা-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, শিল্প-শিক্ষা সংযুক্তি, ক্ষুদ্রউদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং নীতিগত বাস্তবায়ন।—
বিস্তারিত বিশ্লেষণ
১) বর্তমান চিত্র — কি বলছে উপাত্ত?
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উৎসে যুব বেকারত্বের হার ভিন্নভাবে রিপোর্ট করা হয়। উদাহরণস্বরূপ ১৫–২৪ বয়সের যুব বেকারত্বের হার ২০২৪ সালে প্রায় ১১.৪৬% হিসেবে রিপোর্ট করা হয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পরিমাপে (কিছু বিশ্লেষণে) উচ্চতর অনুমানও পাওয়া যায়; এছাড়া সামগ্রিক দেশীয় বেকারত্ব (সব বয়স মিলিয়ে) তুলনামূলকভাবে নিচে থাকতে পারে। এই ভিন্নতার কারণে নীতিনির্ধারণে সতর্ক প্রত্যাশা ও নির্ভরযোগ্য জাতীয় জরিপের গুরুত্ব বেড়ে যায়।
২) সমস্যার মূল কারণ
শিক্ষার মান ও বাজারের চাহিদার মধ্যে বড় ফাঁক — শিক্ষিত তরুণরা প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা পেলেও বাস্তব দক্ষতায় দুর্বল।

প্রযুক্তি ও অটোমেশন: পুরোনো দক্ষতায় চাহিদা কমে যাচ্ছে; নতুন দক্ষতা না থাকায় চাকরি মিস করছে তরুণরা।
অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি ও কর্মের গুণগত অংশ: বহু কাজই অস্থায়ী ও নিরাপত্তাহীন।
উদ্যোক্তা পরিবেশে বাধা — অর্থায়ন, বাজার ও পরামর্শের অভাব তরুণ উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কমায়।
৩) ইতিমধ্যেই নেয়া উদ্যোগ — কি কাজ চলছে?
সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো স্কিল-ভিত্তিক প্রকল্প দ্রুত বাড়াচ্ছে — জাতীয় স্কিল নীতিমালা, বড় প্রকল্প (ASSET/অন্যান্য) ও UNICEF-এর SKILFO মতো উদ্যোগ তরুণদের প্রশিক্ষণ ও কাজের বাজারের সাথে যুক্ত করছে। এগুলো এক হাজার হাজার যুবসমাজকে প্রশিক্ষণ ও চাকরির রাস্তায় নিয়ে আসছে—তবে বিস্তৃতি ও দক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি।—
করণীয় (নীতিগত ও ব্যবহারিক সুপারিশ)
ক) শিক্ষা-শিল্প সংযোগ বাড়াতে হবে
শিক্ষা পাঠ্যক্রমে শিল্প-ভিত্তিক অনুশীলন, ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক করা, এবং বেসরকারি খাতকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারী করা — যাতে গ্র্যাজুয়েটরা কাজের বাজারে তাত্ক্ষণিকভাবে প্রবেশ করতে পারে।
খ) দক্ষতা ও পুরোনো/নতুন স্কিল ট্রান্সফার
ডিজিটাল দক্ষতা, ট্রেড-স্কিল ও সফট-স্কিল (যোগাযোগ, সমস্যা সমাধান) শেখাতে সারাদেশে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রসার ও অনলাইন-অফলাইন হাইব্রিড কোর্স চালু করতে হবে। UNICEF ও সরকারি স্কিমগুলোকে স্থানীয় অর্থনীতি ও ক্ষুদ্র শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী ড্রাইভ করা জরুরি।
গ) যুব-উদ্যোক্তা উদ্যোগ সহজতর করা
ছোট লোন, কর সুবিধা, এক দরজার লাইসেন্সিং ও ‘মেন্টরিং হাব’ গড়ে তুললে নতুন ব্যবসা দ্রুত বেড়ে উঠবে। অঞ্চলভিত্তিক ক্লাস্টার পলিসি (যেখানে ট্রেনিং, কাঁচামাল, বিপণন একসাথে থাকে) বাস্তবায়ন করা উচিৎ।
ঘ) ডেটা ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ভুল করা জাতীয় পর্যায়ে বার্ষিক/ত্রৈমাসিক লেবার ফোর্স সার্ভে আরও দ্রুত স্বচ্ছ ও বিস্তারিত হতে হবে—বৈবাহিক, স্থানান্তরমূলক, অস্থায়ী কাজ ইত্যাদি আলাদা করে বিশ্লেষণ করলে নীতি নির্ধারণ সহজ হয়।
ঙ) সামাজিক সুরক্ষা ও নীতি-প্রতিষ্ঠা
কোয়ালিটি-জব সৃষ্টির সময় শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, মজুরি ন্যূনতম মান এবং নারী ও প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে—যেন চাকরির প্রসার স্থায়ী ও ন্যায়সংগত হয়।—
শেষ কথা (সম্পাদকীয় প্রস্তাব)
যুব শক্তি—দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাদের সম্ভাব্যতা কাজে লাগিয়ে দক্ষ, গুণগত এবং টেকসই চাকরি সৃষ্টিই দেশের সমৃদ্ধির পথ। এজন্য সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প ও দাতব্য-সংস্থা একত্রে বাস্তবতা-ভিত্তিক, ফলপ্রসূ ও অঞ্চলভিত্তিক নীতি চালু করলে প্রজন্মভিত্তিক কর্মসংস্থানের সংকট সহজে জয় করা সম্ভব।

















