নতুন কারিকুলাম, শিক্ষককে শক্তিশালী করা ও ডিজিটাল অবকাঠামো—একসাথে এগোচ্ছে নতুন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার: আধুনিক যুগে টিকে থাকতে আমাদের করণীয়
- আপডেট সময় : ০৮:৩০:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 150
সম্পাদকীয়
বর্তমান বিশ্বে জ্ঞান অর্জনের নিয়ম দ্রুত বদলাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও বিশ্ববাজারের চাহিদা শিক্ষকের পাঠ্যক্রম কিংবা পরীক্ষার রং-ফেরি ছাড়িয়ে টেকসই দক্ষতা চায় — সমালোচনামূলক চিন্তা, সমস্যা সমাধান, ডিজিটাল বলতে বোঝার ক্ষমতা ও সামাজিক দক্ষতা। বাংলাদেশেও এই পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে; নতুন কারিকুলাম ও শিক্ষানীতির প্রয়াস শুরু হলেও বাস্তবতার ফাঁক এখনও চোখে পড়ে। শিক্ষার লক্ষ্য কেবল জ্ঞান নয় — জীবনমুখী দক্ষতা বৃদ্ধিই আজ প্রধান চাহিদা।
নতুন কারিকুলাম: আশা ও বাস্তবতা
সরকারি উদ্যোগে কারিকুলাম পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে এবং শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও পাঠ্যরূপ বদলানোর উদ্যোগ দেখা যায়। কিন্তু নকশা করা নীতিগুলো সফল করতে হলে শ্রেণিকক্ষ থেকে নীচু পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও উপকরণ প্রয়োজন। এই কারিকুলাম পরিবর্তন নিয়ে চলমান আলোচনা এবং বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলোর বিশ্লেষণ সম্প্রতি মিডিয়ায় উঠে এসেছে।
শিক্ষকের ক্ষমতায়ন—পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু
কোনো নতুন নীতি সফল হবে না যদি তা প্রয়োগ করার অনুশীলনরত শিক্ষক না থাকে। নিয়মিত পেশাদার উন্নয়ন, ক্লাসরুম-সামগ্রী, অনলাইন প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি বদলাতে হবে। বিশেষত গ্রামীন অঞ্চলে যেখানে ইন্টারনেট বা ট্রেনিং সুবিধা সীমিত, সেখানকার শিক্ষকদের জন্য টার্গেটেড সহায়তা দরকার। গবেষণা ও বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে কারিকুলাম বদল হলেও বাস্তবে অবকাঠামোর ঘাটতি শিক্ষার মানে বড় বাধা তৈরি করে।

ডিজিটাল অবকাঠামো ও দুর্যোগ-সহনশীল শিক্ষা
প্রাকৃতিক ঝুঁকি ও জলবায়ু সম্পর্কিত ঘটনার কারণে গত কয়েক বছরে শিক্ষায় ব্যাঘাত ঘটেছে—বিশেষত স্কুল বন্ধ বা অনলাইনশিক্ষায় সমস্যা দেখা গেছে। ডিজিটাল ক্লাসরুম, টেকসই স্কুল অবকাঠামো ও দুর্যোগ-প্রতিরোধী পরিকল্পনা প্রয়োজন যাতে শিক্ষা স্থবির না হয়। UNICEF ও আন্তর্জাতিক রিপোর্ট এসব ঝুঁকি ও প্রয়োজনীয়তার কথা বারবার বলছে।
শিক্ষা নীতিতে সামাজিক সুবিচার (Equity)
শিক্ষার মান বাড়ানো মানে কেবলমাত্র শহরে উন্নত স্কুল নয়—গ্রাম, দরিদ্র ও সংখ্যালঘু এলাকায় শিক্ষার অ্যাক্সেস নিশ্চিত করাও জরুরি। বর্তমান তথ্য অনুযায়ী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নামচারা বা ড্রপ-আউটের হার অনেকে পর্যায়ে চিন্তার বস্তু। দরিদ্র পরিবার, শিশু শ্রম এবং প্রাকৃতিক ঝটিকা—এসব সমস্যা সামাল দিতে সমন্বিত নীতি দরকার।
করণীয়: বাস্তবসম্মত ও কার্যকর প্রস্তাব
শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারণ: অন-সাইট ও অনলাইন প্রশিক্ষণ মিশ্রিত করে বাস্তব-ভিত্তিক কর্মশালা।
কারিকুলামের জীবনমুখী রূপায়ণ: পাঠ্যকে প্রয়োগযোগ্য করে, পরীক্ষা-ভিত্তিক মূল্যায়ন কমিয়ে ক্রমবর্ধমান মূল্যায়ন।
ডিজিটাল ও দ্যুর্যোগ-সহনশীল অবকাঠামো: স্কুলে নিরাপদ ইন্টারনেট, টেকসই শ্রেণিকক্ষ ও অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম।
তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা: BANBEIS/আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুসারে নীতি নির্ধারণ ও লক্ষ্যমাত্রা স্থাপন।
সমাপ্তি — সুযোগ আর জবাবদিহিতা
শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার একটি সংবেদনশীল ও জটিল প্রক্রিয়া। এটি জেনেপ্রয়োগে, শিক্ষক-সমর্থনে এবং অবকাঠামো-উন্নয়নে মিলিত প্রচেষ্টায় সফল হবে। সরকারের পরিকল্পনা, একাডেমিক সম্প্রদায়, বেসরকারি অংশীদার এবং সম্প্রদায়—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যদি আমরা এখনই সক্রিয় হয়ে ত্রুটিগুলো শনাক্ত ও সমাধান করি, তবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি আরো উদার, দক্ষ ও টিকে থাকার মতো শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

















