*শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে আমার পরিকল্পনা সমূহ- ড. শাহাবুদ্দিন আহমেদ*
- আপডেট সময় : ১০:০২:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
- / 87
দুঃখ নিয়ে বলতে হয় এত এত বিষয় নিয়ে সংস্কার কমিনশন হল যাদের মদ্ধে কিছু আবার অপ্রয়োজনীয় বা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু জাতীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত খাত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নাই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটি গত ১৬ বছরে নাহিদ, দিপু মনি, নওফেল আর জাফর ইকবালরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নয় বরং ধ্বংস করেই ফেলেছে। আমি এমপি হতে পারলে শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে আমার
পরিকল্পনাগুলো নিন্মরুপঃ
১. শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধিতে সুপারিশ
ইউনেস্কোর পরামর্শ হচ্ছে শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ৬ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের বাজেটের গড়ে ৭.১% ব্যয় করে থাকে পারলে শিক্ষা ও গবেষনায়। অথচ বাংলাদেশ বাজেটের মাত্র ১.৬৯ শতাংশ ব্যয় করে সবচেয়ে অবহেলিত এই খাতটিতে। তারপরও এই অর্থের নুন্নতম ৪০-৫০% অপব্যাবহার হয় বিভিন্ন অনিয়ম অর দুর্নীতির কবলে পড়ে। দেশ-বিদেশে শিক্ষাব্যবস্থার সাথে প্রত্যক্ষ সংস্পর্শের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমি ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব এই খাতটিকে বিশ্বের উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে।
২. প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন
শিক্ষা ব্যবস্থার বুনিয়াদ হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। দেশের চার স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আমাদের সবচেয়ে অবহেলিত সেক্টর হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। জেনে আশ্চর্য হবেন যাদের মাধ্যমে দেশের মেরুদন্ড উন্নতির প্রথম সোপানে পা দেয় তাদেরকে আমরা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীতে আসীন করে রেখেছি- দুর্ভাগ্য। আমি এমপি হতে পারলে প্রাথমিক থেকে শুরু করে সকল স্তরের শিক্ষকদের মর্যাদা প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করতে সচেষ্ট হবো ইনশাআল্লাহ। পৃথিবীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনের একটা ধারণা দেই: লুক্সেমবার্গ, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় প্রাইমারি শিক্ষকদের বেতন প্রতি মাসে ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা। লক্ষ বাদ দিলাম আমাদের দেশে প্রাথমিকের শিক্ষকদের নূন্যতম বেতন ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বেতন দেয়া অসম্ভব কিছু নয়। শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ যেমন সংযুক্ত আবার আমিরাত, সৌদি আরাবিয়া এবং কাতার তাদের বেতন স্কেল উন্নীত করে প্রতি মাসে ন্যূনতম ৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি নিয়েছে এসেছে। বলা দরকার, শিক্ষকদের শুধু বেতন বাড়িয়ে তেমন লাভ হবে না বরং পাশাপাশি তাদের গুনগত মান বৃদ্ধি আশু প্রয়োজন।

২.১ স্কুল ড্রপ আউট নিরসন।
জেনে অবাক হবেন দেশে সেকেন্ডারি বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ড্রপ আউটের হার প্রায় ৩০%। ফারিদপুর-১ এর তিন উপজেলায় এই ড্রপ আউটের হার ৩৫ -৩৮%। আমি এম পি নির্বাচিত হলে এই সংখ্যা নামিয়ে আনার লক্ষ্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করব, ইনশাআল্লাহ।
৩. মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন
বাংলাদেশের মোট শিশু শিক্ষার্থীর ১৪.১% ভর্তি হয় কওমি মাদ্রাসায়, যারা বলতে গেলে মেইনস্ট্রিম শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে। মোটামুটি ধর্মীয় শিক্ষার উপরে নির্ভরশীল বিশাল এই সংখ্যাটিকে আমরা মার্জিনালাইস্ড করে রেখেছি। তথাকথিত আধুনিক বা কর্মমুখী শিক্ষার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। এই শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে আপনি একটা জাতিকে কিভাবে উন্নত জাতিতে রূপান্তরিত করবেন? আমি এমপি হলে এদের শিক্ষা কারিকুলাম উন্নতি করে বিজ্ঞান, ব্যবসায়িক শিক্ষা এবং কলার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্তি করে মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়নে সচেষ্ট থাকবো ইনশাআল্লাহ।
৪. কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন
জেনে অবাক হবেন বাংলাদেশে বর্তমানে নুন্যতম ২৬ লক্ষ শিক্ষিত বেকার, যার পেছনে অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে কর্মমুখী শিক্ষার অভাব। উন্নত দেশগুলোতে কারিগরিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০-৫০% সেখানে আমাদের আছে মাত্র ৫% শতাংশ, যা আমাদের দেশে উন্নতির পথে একটা বিশাল অন্তরায় বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার উন্নতির জন্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি, কারিগরি শিক্ষায় বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু, শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করন, এবং ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির উপর জোর দেয়া প্রয়োজন। আর সেই কাজটিই করব আমি ইনশাআল্লাহ্!
৫. গবেষণা খাতে উন্নয়ন
একটা দেশ কতটা উন্নত সেটা তার গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দ দেখলেই বুঝতে পারবেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সাউথ কোরিয়া এবং জাপান তাদের জিডিপির ৩.৫-৪.৯% শতাংশ ব্যয় করে গবেষণা খাতে। অথচ আমাদের নামে মাত্র বরাদ্দ ০.১৬%, যার প্রায় ৮০ ভাগ পেয়ে থাকে ২-৩ বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের গবেষণার বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য একটা তথ্য দেই- মাত্র ৫.৫ মিলিয়ন মানুষের একটি দেশ সিঙ্গাপুরে প্রতি বছর গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা ৫০ হাজারের অধিক, সেখানে ১৮০ মিলিয়ন মানুষের বাংলাদেশ প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার। যাইহোক, আমি এমপি নির্বাচিত হলে পৃথিবীর একজন শীর্ষ বিজ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদ হিসাবে আমি আমার দেশ বিদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাব ইনশাআল্লাহ।
৬. ব্রেইন ড্রেইন রোধ এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ
বাংলাদেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রায় ৪০% শিক্ষার্থী পড়াশোনা বা রেসিডেন্সি নিয়ে দেশের বাইরে চলে যায়; যারা আর দেশে ফিরে আসে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার এই দেশে তারা ফিরে আসার মতো কোনো প্রণোদনাও পায় না। শীর্ষ মেধাবী এই সমস্ত শিক্ষার্থীদের দেশে ধরে রাখতে অথবা বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রি এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে কোলাবরিটি পার্টনারশিপের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং উপযুক্ত ইনসেন্টিভ প্রদান করা আমার পরিকল্পনার অংশ।
৭. মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনা
মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মহিলা বান্ধব করে গড়ে তোলা, যেমন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, টয়লেট, সেনেটারি সামগ্রী, যাতায়াত এবং ছাত্রী নিবাসে আসনের নিশ্চয়তা প্রদান করা দরকার।
৮. বৃত্তি এবং ক্রীড়া শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি
আর্থিকভাবে অসচ্ছল সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি এবং বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা। অধিক হারে ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করন এবং পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার ব্যাবস্থা করা।
পরিশেষে বলতে চাই উপরোক্ত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো সম্ভব। সে কারণে প্রয়োজন যোগ্য ব্যক্তিকে উপযুক্ত স্থানে পদায়ন। সর্বোপরি, জাতীয় সংসদে এবং মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা এবং গবেষণায় অভিজ্ঞ, সৎ ও যোগ্য প্রতিনিধি।
লেখকঃ
ড. শাহাবুদ্দিন আহমেদ,
সহকারী অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি মালায়া
এডজাঙ্কট সহযোগী অধ্যাপক, IUBAT ঢাকা
ওয়ার্ল্ড টপ ২% সাইন্টিস্ট (এনার্জি এবং এনভায়রনমেন্ট)
ভাইস প্রেসিডেন্ট-অস্ট্রেলিয়া বিএনপি
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, জিয়া সাইবার ফোর্স-কেন্দ্রীয় কমিটি।
সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী, ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা)।
















