জলবায়ুর আঘাত, ইনপুট ও বাজারের অস্থিরতা — সময়োপযোগী নীতি ও প্রযুক্তিই পারে কৃষক ও জাতির আশা ফিরিয়ে আনতে
বাংলাদেশে কৃষি অর্থনীতি: সংকট ও সম্ভাবনা
- আপডেট সময় : ০৮:৩০:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 217
বাংলাদেশের কৃষি এখনো অর্থনীতির মেরুদণ্ড হলেও সেক্টরের সহযোগী অবস্থা উদ্বেগজনক। কৃষি, বন ও মৎস্যখাতের মোট যোগফল দেশের মোট জিডিপির প্রায় এক অংশ দাঁড়ায়—সাম্প্রতিক সরকারি ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা যায় এ খাতের অংশ ধীরে ধীরে নামছে। এই পরিবর্তন শুধু অর্থনৈতিক কাঠামোর বাস্তবতা নয়, বরং কৃষকের আয়ের অনিশ্চয়তা, উৎপাদন খরচের উত্থান ও জলবায়ুর প্রতিকূলতার সম্মিলিত ফলাফল।
সংকটের মুখগুলো স্পষ্ট: অতিবর্ষা ও বন্যা, উচ্চ তাপমাত্রা ও শুকনো সময়ের বৃদ্ধি—এসব কনজিউমিং জলবায়ু ঝুঁকি সরাসরি ফসল উৎপাদন ও কর্মদিবস ক্ষতিসাধন করছে। সাম্প্রতিক বিশ্বের গবেষণা ও রিপোর্টগুলো দেখায় শুধু তাপমাত্রা বৃদ্ধিই নয়, স্বাস্থ্য ও শ্রমঘাটতি-সহ অর্থনীতিতে সরাসরি ক্ষতির মাত্রাও বেড়েছে; যা কৃষি উৎপাদনের ওপর চাপ বাড়ায়।
উৎপাদন-পাশেই বাজার ও ইনপুট সংকটে ধাক্কা খায় কৃষক। ধানের মতো প্রধান ফসলের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উৎপাদনশৈলীর ওঠা-নামা এবং কখনো বন্যা-সম্পর্কিত ক্ষতি দেশের মজুদ ও মূল্য নির্ধারণকে অনিশ্চিত করেছে—গত বছর বড় ধরনের বানপল্লী ক্ষতি রেকর্ড করা হয়েছিল, যা সরবরাহ চেইনে বিভ্রান্তি ও আমদানি-আশ্রয় বাড়ায়।

আরেক অগ্নিকাণ্ডি বিষয় হলো ইনপুট (বিশেষত সার) সাপ্লাই ও মূল্য: কৃষি ইনপুট সরবরাহের ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত ঝুঁকি ও বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হওয়ার অভিযোগ উঠছে; সরকারের কয়েকজন অভিভাবক দাবি করেছেন যে সম্পদগুলো পর্যাপ্ত আছে, তবে ক্ষেত্রভিত্তিক সরবরাহ ও দামের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে—এই দ্বৈত মেসেজ কৃষককে আরো অনিশ্চিত করে। নিজস্ব পরিচালনা ও বাজার নিয়ন্ত্রনের তাগিদ এখানে স্পষ্ট।
তবু সম্ভাবনাও কম নয়। ধান ও অন্যান্য প্রধান ফসলের উৎপাদন সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস ও রিপোর্টগুলো কয়েকটি ক্ষেত্রে উত্পাদন বৃদ্ধিরও ইঙ্গিত দেয়—উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সঠিক ভর্তুকি, উচ্চ ফলনশীল জাত ও সঠিক প্রযুক্তি প্রয়োগ মিললেই রেকর্ড সংশোধন সম্ভব। কৃষি-সংক্রান্ত নীতিতে টেকসই বিনিয়োগ, ক্লাইমেট-স্মার্ট কৃষি ও বাজার যুক্তরাষ্ট্রিকীকরণ (market linkages) করলে দ্রুত উন্নতি ধরা দিতে পারে।
নীতিগত সুপারিশ (সংক্ষিপ্ত তালিকা)
- জলবায়ু-সহনশীল প্রযুক্তি গ্রহণ: ভুমিহিত জাত, বন্যা-উদ্ভূত এবং উষ্ণতা-সহনশীল ফসল উদ্ভাবন ও দ্রুত সম্প্রসারণ।
- লজিস্টিক ও সাপ্লাই চেইন শক্তিশালীকরণ: মাঠ থেকে বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন; গুদাম-শীতলীকরণ ও স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক।
- ইনপুট-নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা: সার ও বীজের সরবরাহ-ব্যবস্থায় মনিটরিং, সিন্ডিকেট-নিয়ন্ত্রণ ও সাশ্রয়ী মূল্যনীতি।
- বাজার-ফরাসি (market intelligence) ও রিস্ক ম্যানেজমেন্ট: কৃষক-সমিতি ও কৃষি বীমা ব্যবস্থা শক্ত করা; তথ্যভিত্তিক মূল্য-অগ্রদর্শী নীতিমালা।
- গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ: কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সটেনশন সার্ভিস ও আইসিটি-ভিত্তিক টুলসের মাধ্যমে কৃষকের যোগ্যতা বৃদ্ধির উপর ফোকাস।
পাঠকের কাছে শেষ কথা — বাংলাদেশে কৃষি শুধু ফসল উৎপাদন নয়; এটি গ্রামীণ সমৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতীক। সংকট যতই জটিল হোক না কেন, যদি সরকার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাত মিলেই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে—কৃষক-সুরক্ষা, প্রযুক্তি ও বাজার-সংযোগ বাড়িয়ে—তবে এই সেক্টর থেকে দেশ দ্রুত পুনরুদ্ধার ও উন্নতি ঘটাতে পারবে। সময়ই দাবি করছে বাস্তব, দ্রুত কিন্তু দরদশীল নীতি ও মাঠ-ভিত্তিক সমাধান।
আরো পড়ুন

















