জুলাই গণঅভ্যুত্থার রায়: হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচ গুরুতর অভিযোগ
- আপডেট সময় : ০২:৩৭:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
- / 29
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে চূড়ান্ত উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের রায় শোনার অপেক্ষায় রয়েছে পুরো দেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকা কোনো নেতার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে এটি প্রথম বিচার।
আজ দুপুর ১২টা ৩৪ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম মর্তূজা হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের রায় পাঠ শুরু করেন। তিনি গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে হাসিনার কথোপকথনের কল রেকর্ড উপস্থাপন করেন।
পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ
ট্রাইব্যুনাল হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়, পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র, উসকানি এবং গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ গঠন করেছে।

আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা
অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় জুলাই–আগস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হয় এবং আহত হয় প্রায় ২৫ হাজার। বহু মানুষ পঙ্গু হয়ে যান, অনেকেই হারান দৃষ্টিশক্তি।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ১৪ জুলাই ২০২৪ সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যা দিয়ে উত্তেজনাকর বক্তব্য দেন। এর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র রাজনৈতিক কর্মীরা ব্যাপক হামলা চালিয়ে হতাহত ঘটায়।
প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ
দ্বিতীয় অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা। এই নির্দেশ কার্যকর করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আবু সাঈদ হত্যা ও অন্যান্য অভিযোগ
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডকে তৃতীয় অভিযোগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, পাঁচ আগস্ট চাঁনখারপুলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করে—যা নির্দেশ, উসকানি, ষড়যন্ত্র ও সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অংশ।
আশুলিয়ার লাশ পোড়ানোর ঘটনা
সবচেয়ে নৃশংস অভিযোগটি হলো ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির সময় আশুলিয়ায় ছাত্রদের গুলি করে হত্যা এবং লাশ পুড়িয়ে ফেলা। অভিযোগে বলা হয়েছে, এক নিহতের মধ্যে একজন তখনও জীবিত ছিলেন। এই নির্মম ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবেও তিন আসামিকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বিশাল অভিযোগপত্র
মামলায় প্রসিকিউশন মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করে। এর মধ্যে ২,০১৮ পৃষ্ঠা তথ্যসূত্র, ৪,০০৫ পৃষ্ঠা জব্দতালিকা ও নথিপত্র এবং ২,৭২৪ পৃষ্ঠায় শহীদদের তালিকা সংযুক্ত রয়েছে।















