বিএনপির মিত্রদের আসনে ছাড়: ভোটের মাঠে চূড়ান্ত হচ্ছে প্রার্থী তালিকা
- আপডেট সময় : ১০:০১:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫
- / 142
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর জন্য দ্রুতই আসন ছাড়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা ইতোমধ্যেই মিত্র দলগুলোর কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চেয়েছেন। এই তালিকা হাতে এলেই চূড়ান্ত হবে বিএনপি জোটের প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া।
সূত্র অনুযায়ী, যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় প্রায় ৫০টি দল তাদের তালিকা দেবে। এর মধ্য থেকে যাদের নির্বাচনে জিতে আসার সম্ভাবনা বেশি, সেইসব নেতাদেরই আসন ছেড়ে দেবে বিএনপি। মিত্র দলগুলোর জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপি নাম চাইলেও কয়েকটি দল ছাড়া বাকিরা এখনো তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে পারেনি।
বিভিন্ন মিত্র জোটের তৎপরতা
গণতন্ত্র মঞ্চ, যা ছয়টি দলের সমন্বয়ে গঠিত, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আগামী ৪ অক্টোবরের মধ্যে তাদের জোটের শরিকদের তালিকার প্রাথমিক বাছাই সম্পন্ন হবে। অন্যদিকে, ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এখনো প্রার্থী তালিকা তৈরি করছে।

বিএনপি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা নিশ্চিত করেছেন যে, শরিক দলগুলোর তালিকা পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করা হবে। প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, সাধারণ মানুষ এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই লক্ষ্যেই বিএনপি চলতি সপ্তাহ থেকে আবার মিত্র দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করার পরিকল্পনা করেছে, যাতে তাদের চাহিদা ও মনোভাব স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
সম্ভাব্য আসন ও নেতার নাম
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র বা সমমনা দলগুলোকে ২৫ থেকে ৩০টি আসনে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। আসন নিশ্চিত না হলেও তারা ছোট দলগুলোর নেতাদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে, যারা বিএনপির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিগত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে মাঠে থাকা দলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম), বাংলাদেশে জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণঅধিকার পরিষদ এবং আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।
গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গণসংযোগ নির্দেশনা
৫ আগস্টের পর বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলের ৬ জন নেতাকে তাদের নিজ নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে। এই নেতারা হলেন:
- আ স ম আবদুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪)
- মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-৪)
- জোনায়েদ সাকি (ঢাকা-১২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬)
- নুরুল হক নুর (পটুয়াখালী-৩)
- রাশেদ খান (ঝিনাইদহ-২)
- এহসানুল হুদা (কিশোরগঞ্জ-৫)
এছাড়াও আরো কয়েকজন নেতা একই ধরনের নির্দেশনা পাওয়ার দাবি করেছেন।
কোন দলের কত আসন দাবি?
- গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন যে, তারা বিএনপির কাছে ১৬টি আসনের একটি তালিকা জমা দিয়েছেন। তিনি নিজে ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছেন।
- এলডিপিকে বিএনপি প্রাথমিকভাবে দুটি আসন ছাড়তে পারে। এর মধ্যে কুমিল্লা-৭ এ ড. রেদোয়ান আহমেদ এবং চট্টগ্রাম-১৪ থেকে অধ্যাপক ওমর ফারুক সানি নির্বাচন করতে পারেন।
- গণঅধিকার পরিষদকে দুটি আসন ছাড়ার ইঙ্গিত রয়েছে।
- জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা দিয়েছে। দলের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ঢাকা-১৩ এবং মহাসচিব মোমিনুল আমিন রাজবাড়ি-২ থেকে গণসংযোগ শুরু করেছেন।
- বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) পাঁচটি আসন চেয়ে তালিকা দিয়েছে। চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থ ঢাকা-১৭ এবং মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ ঢাকা-৫ থেকে নির্বাচনি কাজ করছেন।
- জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইল-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
- ১২ দলীয় জোট এখনো তালিকা না দিলেও জোটপ্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার পিরোজপুর-১ এবং মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন কুষ্টিয়া-২ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে মাঠে ছিল, তাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে। বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জোর দিয়ে বলেছেন যে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সবাইকে নিয়েই জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। এই লক্ষেই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি।
















