বাংলাদেশ ০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Insaf World Banner

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের

অন্তর্বর্তী সরকার: সফলতা ও চ্যালেঞ্জ

ইনসাফ বিশ্ব ডেক্স
  • আপডেট সময় : ১০:৪৮:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
  • / 403
Insaf World Banner
"ইনসাফ বিশ্ব" পত্রিকার নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
সংবাদটি শেয়ার করুন :

গত ৮ অক্টোবর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পূর্ণ হয়েছে। এই সরকার শুরুর সময় থেকে জনগণের প্রত্যাশা ছিল বিশাল, বিশেষত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর। দুই মাসে সরকারের অর্জন ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ছিল প্রধান কিছু চ্যালেঞ্জ। তবে অনেকেই মনে করেন যে সরকার এখনো এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করতে পারেনি।

Insaf World Banner 1

জনগণের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের লাগাম টানা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নিত্যপণ্যের দাম কমার পরিবর্তে আরো বেড়েছে। কলাবাগানের আমিনুল ইসলাম বলেন, “ডিমের হালি ৬০ টাকা এমন আগে কখনও দেখিনি। অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়ছে। মনে হচ্ছে বাজার সিন্ডিকেট আরো শক্তিশালী হয়েছে।” জনগণের মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।

ঢাকার স্কুল শিক্ষিকা পিংকি অধিকারীও একই অভিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, “নিত্যপণ্যের দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। এর জন্য কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।” তার মতে, সরকারের ব্যর্থতা এখানেই যে, তারা জনগণের আস্থাকে ধরে রাখতে পারেনি এবং বাজার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

Insaf World Banner 2

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সেটা যথেষ্ট বলে মনে করেন না অনেকেই। পিংকি অধিকারী বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তেমন অবনতি দেখিনি, তবে ট্রাফিক ব্যবস্থায় পুলিশের ভূমিকা যথেষ্ট নয়।” সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীনও হয়েছেন বলে জানান তিনি।

বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও তা এখনো সন্তোষজনক নয়। যদিও অর্থনৈতিক অপরাধ কিছুটা বন্ধ হয়েছে, তবে সামগ্রিক নিরাপত্তার মান উন্নয়নে এখনও প্রচেষ্টা চালানো দরকার।

অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আসন্ন নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলছে, যেখানে বিএনপি এবং অন্যান্য দল নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি, তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, “সংবিধানে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। যদি সব দল একমত হয়, তাহলে সময়সীমা বাড়তে পারে, কিন্তু নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।”

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল মনে করেন, “এই অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য হবে জনগণের নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। এটি নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো অর্থনৈতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ আয়োজন। তবে এ সরকার এখনো বড় দুটি চ্যালেঞ্জ—নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং আইন-শৃঙ্খলার মানোন্নয়ন—সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করতে পারেনি। এছাড়াও নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

সার্বিকভাবে, অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য হলো জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে, বিশেষ করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে।


আরো পড়ুন


 

সংবাদটি শেয়ার করুন :
Insaf World Banner 1
Insaf World Banner 2

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের

অন্তর্বর্তী সরকার: সফলতা ও চ্যালেঞ্জ

আপডেট সময় : ১০:৪৮:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদটি শেয়ার করুন :

গত ৮ অক্টোবর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পূর্ণ হয়েছে। এই সরকার শুরুর সময় থেকে জনগণের প্রত্যাশা ছিল বিশাল, বিশেষত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর। দুই মাসে সরকারের অর্জন ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ছিল প্রধান কিছু চ্যালেঞ্জ। তবে অনেকেই মনে করেন যে সরকার এখনো এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করতে পারেনি।

Insaf World Banner 1

জনগণের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের লাগাম টানা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নিত্যপণ্যের দাম কমার পরিবর্তে আরো বেড়েছে। কলাবাগানের আমিনুল ইসলাম বলেন, “ডিমের হালি ৬০ টাকা এমন আগে কখনও দেখিনি। অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়ছে। মনে হচ্ছে বাজার সিন্ডিকেট আরো শক্তিশালী হয়েছে।” জনগণের মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।

ঢাকার স্কুল শিক্ষিকা পিংকি অধিকারীও একই অভিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, “নিত্যপণ্যের দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। এর জন্য কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।” তার মতে, সরকারের ব্যর্থতা এখানেই যে, তারা জনগণের আস্থাকে ধরে রাখতে পারেনি এবং বাজার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

Insaf World Banner 2

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সেটা যথেষ্ট বলে মনে করেন না অনেকেই। পিংকি অধিকারী বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তেমন অবনতি দেখিনি, তবে ট্রাফিক ব্যবস্থায় পুলিশের ভূমিকা যথেষ্ট নয়।” সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীনও হয়েছেন বলে জানান তিনি।

বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও তা এখনো সন্তোষজনক নয়। যদিও অর্থনৈতিক অপরাধ কিছুটা বন্ধ হয়েছে, তবে সামগ্রিক নিরাপত্তার মান উন্নয়নে এখনও প্রচেষ্টা চালানো দরকার।

অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আসন্ন নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলছে, যেখানে বিএনপি এবং অন্যান্য দল নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি, তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, “সংবিধানে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। যদি সব দল একমত হয়, তাহলে সময়সীমা বাড়তে পারে, কিন্তু নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।”

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল মনে করেন, “এই অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য হবে জনগণের নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। এটি নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো অর্থনৈতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ আয়োজন। তবে এ সরকার এখনো বড় দুটি চ্যালেঞ্জ—নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং আইন-শৃঙ্খলার মানোন্নয়ন—সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করতে পারেনি। এছাড়াও নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

সার্বিকভাবে, অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য হলো জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে, বিশেষ করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে।


আরো পড়ুন


 

সংবাদটি শেয়ার করুন :