একপক্ষে একশ বছরের প্রেক্ষাপটে, বিশ্বপাঠে জাতিসংঘ আজ কতটা কার্যকর? ভূমিকা, বাঁধা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশ্লেষণ
জাতিসংঘের ভূমিকা: আশা নাকি ভ্রান্তি? — সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতার এক অন্তর্দৃষ্টি
- আপডেট সময় : ১০:০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
- / 115
ভূমিকা
জাতিসংঘ—শান্তি, সমন্বয়, মানবাধিকার ও উন্নয়নের প্রতীক—তবে আজকের জটিল বিশ্বে কতটুকু সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে? বিশ্বসংগঠনের যেসব যশ ও স্বপ্ন ছিল, সেগুলোর সঙ্গে বাস্তবের মিল কতটা? এই সম্পাদকীয়তে আমি জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে আশাবাদ ও দর্শনীয় সমালোচনা একসাথে তুলে ধরব এবং পাঠককে এমন প্রশ্নের সামনে দাঁড়াবার আমন্ত্রণ জানাব — “আশা নাকি ভ্রান্তি?”
জাতিসংঘ: ইতিহাস ও উদ্দেশ্য
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশ্বে শান্তি ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠন করা হয় জাতিসংঘ।
its মূল উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে (১) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা, (২) কূটনৈতিক সমঝোতা ও বিশ্ব সংলাপ, (৩) মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রসার, (৪) অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সমর্থন।

কিন্তু আজকের বিশ্বে — প্রযুক্তি, অশান্তি, ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা— এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব?
আশার কারণসমূহ
১. সম্প্রসারিত মানবকল্যাণ ও উন্নয়ন কাজ
জাতিসংঘ এবং এর সংস্থা (যেমন: UNDP, UNICEF, WHO) দুর্যোগ, উপদ্রব ও অনাটিল দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
এসডিজি (Sustainable Development Goals)–এর কাঠামোয় জাতিসংঘ অনেক ক্ষেত্রে দেশগুলোকে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে।
২. আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও সংলাপের মঞ্চ
যদিও শক্তি সীমিত, জাতিসংঘ বিশ্বনেতাদের মধ্যে সংলাপ ও কাঠামোগত আলোচনার সুযোগ দেয়। এই ধরনের মিথস্ক্রিয়া, বিরোধ কমানোর প্রয়াস ও কূটনৈতিক উদ্যোগগুলোর জন্য একটি বাধ্যতামূলক মঞ্চ হয়ে থাকে।
৩. নীতি নির্ধারণ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রসার
জাতিসংঘ অনেক আন্তর্জাতিক চুক্তি, নীতি ও মানবাধিকার ঘাটক প্রবিধান নির্মাণে ভূমিকা রেখেছে। এমনকি নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় (যেমন: জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তি কর্তৃত্ব) নতুন কাঠামো স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
ভ্রান্তির কারণসমূহ ও সীমাবদ্ধতা
১. নিরাপত্তা পরিষদের সংকট ও ভেটো সমস্যা
নিরাপত্তা পরিষদ (Security Council)–এর পাঁচ постоян সদস্যের কর্তৃত্ব ও “ভেটো” ক্ষমতা অনেক সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণকে পঙ্গু করে তোলে। অনেক কূটনৈতিক উদ্যোগই সেখানে আটকিয়ে যায়।
২. সমন্বয়হীনতা ও অর্থসংকট
জাতিসংঘের কার্যক্রম অনেক সময় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বাস্তব অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইচ্ছে-অনিচ্ছার নিচে সীমাবদ্ধ হয়। বিশেষ করে উন্নয়ন ও হিউম্যানিটারি কার্যক্রম পরিচালনায় অর্থের ঘাটতি একটি বড় বাধা।
৩. মিশন ও বাস্তবতার ভুল মিল
কোনো শান্তিরক্ষা মিশন কখনো কখনো সিদ্ধান্তমূলক কাজ না করতে পারার অভিযোগে ঘিরে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কঙ্গো অঞ্চলে অভিন্ন “Force Intervention Brigade” মিশন কর্তৃত্বের প্রশ্ন তুলে ধরেছে — শান্তিরক্ষা ও বল প্রয়োগের মধ্যে সীমারেখা ধোলাই হয়ে যাচ্ছে।
৪. অপপ্রচারণা, দুর্নীতি ও অজ্ঞতা
জাতিসংঘের অভ্যন্তরের দুর্নীতি, কাজের অস্বচ্ছতা, সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও কখনো কখনো অল্প প্রস্তুতির সঙ্গে কাজ করার প্রবণতা নানা স্ক্যান্ডাল সৃষ্টি করেছে।
৫. পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক ওয়াকিবহালতা
বড় শক্তি যেমন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া অংশগ্রহণে প্রায়শই নিজস্ব স্বার্থকে প্রধান রাখে। অনেক সময় তারা আন্তর্জাতিক নথি ও নীতি-মানগুলোর প্রতি আনুগত্য বজায় রাখে না, এবং জাতিসংঘকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বাধাকে সামনে রাখতে বাধ্য করে।
২০২৫-এর সাম্প্রতিক চিত্র: উদাহরণ ও বিশ্লেষণ
সর্বশেষঃ নিরাপত্তা পরিষদ হাইতির জন্য “Gang Suppression Force” অনুমোদন দিয়েছে, যেখানে জাতিসংঘকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালে শান্তিরক্ষা মিশনগুলোর মধ্যে যৌন নিপীড়ন অভিযোজনার সংখ্যা ১০০–এরও বেশি হয়েছে—একটি আতঙ্কজনক চিত্র যা অঙ্গীকার ও বাস্তবতার ফারাক তুলে ধরেছে।
এ বছরের UN সাধারণ অধিবেশনে অনেক দেশই সরাসরি জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদকে মোল্লা মন্তব্য করেছে, যেসব বক্তব্য প্রকৃত পরিবর্তনের আহ্বান বহন করে।


























