একসঙ্গে নির্বাচন ও গণভোট: ব্যয় কমাবে, বাড়াবে দক্ষতা
- আপডেট সময় : ০২:৫৩:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
- / 60
সম্পাদকীয়:
জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট—এই দুটি বৃহৎ জাতীয় প্রক্রিয়া যদি একই দিনে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে রাষ্ট্রের আর্থিক ও প্রশাসনিক উভয় দিক থেকেই তা হতে পারে একটি কার্যকর পদক্ষেপ। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যেখানে সরকারি ব্যয় সংকোচনের প্রয়োজন স্পষ্ট, সেখানে নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজনের চিন্তা নিঃসন্দেহে যুক্তিসঙ্গত।
সরকারের অন্তর্বর্তী পর্যায়ে এখন যে আলোচনা চলছে, তার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে—সংবিধান সংস্কার, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং একই সঙ্গে নতুন সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। এই প্রেক্ষাপটে গণভোট ও নির্বাচনের দিন এক করার প্রস্তাব অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক উভয় দিক থেকেই বাস্তবসম্মত সমাধান হতে পারে।

অর্থ সাশ্রয়ের দিকটি গুরুত্বপূর্ণ
নির্বাচন কমিশনের একটি অনুমান অনুযায়ী, একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। অন্যদিকে, গণভোটের জন্য আলাদা করে আয়োজন করতে হলে অন্তত আরও ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।
অর্থাৎ, দুটি প্রক্রিয়া আলাদাভাবে পরিচালনা করলে রাষ্ট্রকে প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় বহন করতে হবে।
কিন্তু একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলে, ভোটকেন্দ্র, কর্মকর্তা, নিরাপত্তা, পরিবহন ও প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা—সবকিছু একসঙ্গে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এতে সরকারের ব্যয় অর্ধেকে নেমে আসবে, এবং প্রশাসনিক দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে।
প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জনগণের অংশগ্রহণ
একই দিনে ভোট গ্রহণ মানে নাগরিকদের জন্যও সুবিধা। ভোটারদের আলাদাভাবে দুইবার ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে না, ফলে অংশগ্রহণ বাড়বে। একইসঙ্গে ভোটের পরিবেশও শান্তিপূর্ণ রাখার সুযোগ থাকবে।
তবে এই ব্যবস্থায় যথাযথ প্রস্তুতি ও সচেতনতা অপরিহার্য। একটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পাশাপাশি গণভোটের প্রশ্নপত্র যোগ করা হলে ভোটারদের যথাযথভাবে অবহিত করা জরুরি। জনগণের মতামত নিতে হলে তথ্য স্পষ্ট ও নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
রাজনৈতিক বাস্তবতা
যদিও অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে একসঙ্গে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন যৌক্তিক, রাজনৈতিকভাবে এটি বেশ সংবেদনশীল একটি পদক্ষেপ। বিএনপি ও কিছু দল ইতোমধ্যেই বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের গণভোট আয়োজনের ক্ষমতা নেই।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ সংস্কার বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছে। তাই সরকার যদি সমঝোতা ছাড়াই এই পথে এগোয়, তাহলে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।
তবে যদি সরকার সকল দলের মতামত শুনে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় গণভোট ও নির্বাচন একসঙ্গে আয়োজন করে, তাহলে এটি হতে পারে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের একটি নতুন দৃষ্টান্ত।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে উদাহরণ
বিশ্বের বেশ কিছু দেশ ইতোমধ্যে একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করে সফলতা পেয়েছে।
যেমন—সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, এমনকি দক্ষিণ কোরিয়াও বাজেট বাঁচাতে এবং ভোটার অংশগ্রহণ বাড়াতে একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছে।
বাংলাদেশেও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া গেলে তা আন্তর্জাতিকভাবে সুশাসনের প্রতীক হিসেবে প্রশংসা পেতে পারে।
উপসংহার
নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজন করা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সাশ্রয় নয়, বরং এটি হতে পারে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির এক বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ।
তবে এই উদ্যোগের সাফল্য নির্ভর করবে—কীভাবে সরকার রাজনৈতিক ঐকমত্য অর্জন করে এবং কীভাবে জনগণের আস্থা ধরে রাখতে পারে তার ওপর।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার এমন একটি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে তা দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রায় এক নতুন অধ্যায় রচনা করবে—যেখানে সাশ্রয়, অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছতা একই সূত্রে গাঁথা থাকবে।

















