পরীক্ষার আগে শিক্ষকদের লাগাতার আন্দোলনে অচল শিক্ষা কার্যক্রম
- আপডেট সময় : ০৬:২৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
- / 42
দেশজুড়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষা সামনে রেখে শিক্ষাক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। বছরের শেষ সময়ে যখন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী থাকার কথা, তখনই রাজপথে আন্দোলনে নেমেছেন অসংখ্য শিক্ষক। বিভিন্ন দাবিতে একের পর এক সংগঠন রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করছেন।
রোববার পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি শিক্ষক সংগঠন ঢাকায় বিক্ষোভ করেছেন— বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষক ঐক্য পরিষদ, সম্মিলিত নন-এমপিও ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোট। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
শিক্ষক নেতাদের দাবি, দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধান না হওয়ায় তারা বাধ্য হয়েছেন রাজপথে নামতে। পূর্ববর্তী সরকার কেবল আশ্বাস দিয়েছিল, বাস্তবায়ন করেনি। তাদের অভিযোগ— সরকারই শিক্ষাক্রম ব্যাহত হওয়ার জন্য দায়ী।

এদিকে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম শিক্ষকদের এই আন্দোলনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, “শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে।” তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে দাবি আদায় গ্রহণযোগ্য নয়; আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান খুঁজতে হবে।”
অন্যদিকে এমপিওভুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন নন-এমপিও শিক্ষকরা। সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয় ও লাঠিচার্জ করে। এতে আহত হন শতাধিক শিক্ষক। সংগঠনের সভাপতি সেলিম মিয়া বলেন, “আমরা সরকারের সামর্থ্যের মধ্যেই বেতন চাইছি। আমাদের দাবি মানা না হলে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা আসবে।”
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন ও বিভাগীয় পদোন্নতির দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর নেতৃত্বে তারা সারাদেশে ক্লাস বর্জন করেছেন। শহীদ মিনারে তারা কাফনের কাপড় পরে শপথ নেন— দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “সহকারী শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক নয়। আমরা ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করেছি। তাদের প্রস্তাবটি অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।”
একইসঙ্গে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোট প্রক্রিয়াধীন এমপিওভুক্তির গেজেট প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। ২৮ দিন ধরে তারা অবস্থান করছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে।
অন্যদিকে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদ শিক্ষকরা স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির দাবিতে টানা ১৫ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে গিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং আশ্বাস পান যে বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
এছাড়া দেশের প্রায় পাঁচ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা দাবি করছেন, দীর্ঘ এক যুগ বিনা পারিশ্রমিকে দায়িত্ব পালন করেও তাদের ন্যায্য অধিকার দেওয়া হয়নি।
পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। পরীক্ষার আগে শিক্ষকদের লাগাতার আন্দোলন শিক্ষাক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে— যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।













